Last Updated on 2 weeks by zajira news
অনলাইন ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: ঢাকার পূর্বাচলের নতুন শহর প্রকল্পে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির পৃথক তিন মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের জেল-জরিমানা হয়েছে।
পৃথক তিন মামলায় শেখ হাসিনাকে ৭ বছর করে মোট ২১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তিন মামলায় তাঁর এক লাখ টাকা করে মোট তিন লাখ টাকার অর্থদণ্ড; অনাদায়ে ৬ বছর করে মোট ১৮ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এক মামলায় সজীব ওয়াজেদ জয়ের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। পাশাপাশি এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে। আরেক মামলায় সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে।
ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বৃহস্পতিবার দুপুরে এই রায় ঘোষণা করেন। মামলায় ২৩ নভেম্বর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। পরে আদালত রায় ঘোষণার তারিখ (২৭ নভেম্বর) ধার্য করেন। সে অনুযায়ী আজ রায় দেওয়া হলো।
পৃথক এই তিন মামলায় আসামি ৪৭। তবে ব্যক্তি হিসেবে এই সংখ্যা ২২। ১৭ নভেম্বর পৃথক এই তিন মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। এর আগে গত ৩১ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিলেন আদালত।
একটি মামলায় শেখ হাসিনাসহ আসামি ১২ জন। আরেকটি মামলায় শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয়সহ আসামি ১৭ জন। অপর মামলায় শেখ হাসিনা, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ আসামি ১৮ জন।
শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ছাড়া অপর ১৯ আসামির মধ্যে একজন তিন মামলাতেই বেকসুর খালাস পেয়েছেন। তাঁর নাম মো. সাইফুল ইসলাম সরকার। তিনি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা। অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে খালাস দেওয়া হয়।
আসামিদের মধ্যে একমাত্র গ্রেপ্তার আছেন রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। তিন মামলায় তাঁকে এক বছর করে মোট তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তিন মামলায় তাঁকে ৫ হাজার টাকা করে মোট ১৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অনাদায়ে এক মাস করে মোট তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায় ঘোষণা উপলক্ষে আজ তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
তিন মামলায় সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদকে ৬ বছর করে মোট ১৮ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এক লাখ টাকা করে মোট তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ছয় মাস করে দেড় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছেো।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকারকে তিন মামলায় ৬ বছর করে মোট ১৮ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এক লাখ টাকা করে মোট তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ছয় মাস করে দেড় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিনকে ৩ মামলায় ৬ বছর করে মোট ১৮ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এক লাখ টাকা করে মোট তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ছয় মাস করে দেড় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞাকে তিন মামলায় ৫ বছর করে মোট ১৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৫০ হাজার টাকা করে মোট দেড় লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে, অনাদায়ে তিন মাস করে নয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনকে ২ মামলায় ৬ বছর করে মোট ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এক লাখ টাকা করে মোট দুই লাখ টাকার অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অনাদায়ে ছয় মাস করে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রাজউকের সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীনকে তিন মামলায় তিন বছর করে মোট নয় বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা করে মোট ৬০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অনাদায়ে দুই মাস করে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রাজউকের সাবেক সদস্য (উন্নয়ন) মেজর (অব.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরীকে তিন মামলায় তিন বছর করে মোট নয় বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২০ হাজার টাকা করে মোট ৬০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অনাদায়ে দুই মাস করে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদারকে তিন মামলায় এক বছর করে মোট তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৫, ১০ ও ৫ হাজার টাকা করে মোট ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড। অনাদায়ে এক মাস করে তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাসকে দুই মামলায় তিন বছর করে মোট ছয় বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২০ হাজার টাকা করে মোট ৪০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অনাদায়ে দুই মাস করে চার মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রাজউকের সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলামকে দুই মামলায় তিন বছর করে মোট ছয় বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২০ হাজার টাকা করে মোট ৪০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অনাদায়ে দুই মাস করে চার মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রাজউকের সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদকে এক মামলায় তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে দুই মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রাজউকের পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলামকে এক মামলায় তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে দুই মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রাজউকের পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) মো. কামরুল ইসলামকে এক মামলায় তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে দুই মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রাজউকের সহকারী পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) মো. হাফিজুর রহমানকে এক মামলায় এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।রাজউকের সহকারী পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) মো. হাবিবুর রহমান সবুজকে এক মামলায় এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রাজউকের সহকারী পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) নায়েব আলী শরীফকে ২ মামলায় ১ বছর করে মোট ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৫ হাজার টাকা করে মোট ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ১ মাস করে ২ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রাজউকের সহকারী পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) মাজহারুল ইসলামকে এক মামলায় এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
প্লট বরাদ্দের দুর্নীতির অভিযোগে গত জানুয়ারিতে পৃথক ছয়টি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলাগুলোয় শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকসহ অন্যদের আসামি করা হয়। এই ছয় মামলার মধ্যে আজ তিনটির রায় হলো।


