সময়ের জনমাধ্যম

মা-মেয়েকে হত্যা: গৃহকর্মী বোরকা পরে বাসায় ঢোকে এবং বেরিয়ে যায় স্কুল ড্রেসে

Last Updated on 5 days by zajira news

অনলাইন ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: বোরকা পরে এসে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে মা ও মেয়েকে হত্যার পর স্কুল ড্রেস ও মুখে মাস্ক পরে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় গৃহকর্মী।

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে এ ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা হলেন- মা লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫)। পরে খবর পেয়ে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার আসল কারণ জানা যাবে বলে জানান পুলিশ।

সিসি টেলিভিশন ফুটেজে দেখা যায়, সকাল ৭টা ৫২ মিনিট, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় বাসায় প্রবেশ করছেন গৃহকর্মী আয়েশা, গায়ে ছিল কালো বোরকা। এরপর বের হন ৯টা ৩৬ মিনিটে, তখন তার গায়ে দেখা যায় স্কুল ড্রেস। গৃহকর্মী আয়েশা ভাড়া থাকতেন বিহারি ক্যাম্পে। মা ও মেয়ের পরিবারের কাছে তার সম্পর্কে এর চেয়ে বেশি কোনো তথ্য নেই।

নাফিজার বাবা এ জেড আজিজুল ইসলাম উত্তরার সানবিমস স্কুলের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক। স্ত্রী ও একমাত্র কন্যাকে নিয়ে ওই বাসায় প্রায় ১৩ বছর ধরে বসবাস করে আসছিলেন তিনি। তাদের গ্রামের বাড়ি নাটোরে।

প্রতিদিনের মতো সোমবার আজিজুল সকাল ৭টার দিকে স্কুলের উদ্দেশে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। স্কুলে পরীক্ষা চলমান থাকায় বাসায় ফেরেন তাড়াতাড়ি। ১১টার পরে বাসায় এসে প্রথমে মেয়ের রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পান তিনি। পরে রান্নাঘরে গিয়ে দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন তার স্ত্রী।

শিক্ষক আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বাসায় কাজের মহিলা দরকার ছিল। সাধারণত গেটে অনেকে কাজের সন্ধানে আসে। চার দিন আগে একটি মেয়ে আসে। বোরকা পরা মেয়েটি দারোয়ান খালেকের কাছে কাজের সন্ধান করলে, সে বাসায় পাঠিয়ে দেয়। এরপর স্ত্রী ও মেয়ে তার সঙ্গে কথা বলে কাজে রেখে দেয়। পরে স্ত্রীর মুখে শুনেছি, মেয়েটার নাম আয়েশা। বয়স আনুমানিক ২০ বছর। তার গ্রামের বাড়ি রংপুর। জেনেভা ক্যাম্পে চাচা-চাচির সঙ্গে থাকে। বাবা মা আগুনে পুড়ে মারা গেছে। তার শরীরেও আগুনে পোড়ার ক্ষত রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মেয়েটা কাজ শুরুর পর প্রথম দুদিন সময় মতো এসেছে। রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আসে। আজ (সোমবার) কি হয়েছে, এটা তো আর বলার অবস্থা নেই।’

এই হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে ছুটে আসেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। তারা সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িতকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

স্বজনরা বলেন, নিচতলার গার্ডের মাধ্যমে কাজে আসছে। মুখে পোড়া দাগ আছে। স্কুল ড্রেস ও হিজাব পরে বেরিয়ে গেল। গার্ডের কেনো সন্দেহ হলো না- এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা।

পুলিশ আসার আগেই নাফিজাকে নেয়া হয় হাসপাতালে, সেখানেই মৃত ঘোষণা করে চিকিৎসক। পরে পুলিশ মা লায়লা আফরোজের মরদেহ নিয়ে যায়।

পুলিশ জানায়, মেঝে ও দেয়ালে অনেক দাগ রয়েছে। ঘরের ভেতরে আলমারি এবং ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে শুরু করে ব্যবহার্য অনেক জিনিস তছনছ অবস্থায় রয়েছে।

মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন জানান, সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে জড়িতদের আইনের আওতায় নেয়া হবে। হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। মা-মেয়ের মরদেহ নেয়া হয়েছে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে।