সময়ের জনমাধ্যম

ছাত্রলীগ নেতাদের পদত্যাগের হিড়িক

Last Updated on 11 months by zajira news

নিউজ ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে ছাত্রলীগের অন্তত ১২৪ জন নেতাকর্মী পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। বিভিন্ন সময় সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেন এসব নেতাকর্মী।

সোমবার রাত ১০টার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-নেত্রীরা ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তাদের পদত্যাগের ঘোষণা দিতে থাকেন।

কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার কারণেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত হল এবং নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানা যায়। এরই মধ্যে নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের ১৬তম ব্যাচের সকল ছাত্রী একযোগে ছাত্রলীগ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন।

কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছেন, একজন ছাত্র হয়ে আরেকজন ছাত্রের শরীরে এমন নির্মমভাবে যারা আঘাত করতে পারে, সেই দল থেকে তারা ইস্তফা নিয়েছেন।

নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে প্রথম পদত্যাগকারী নুসরাত জাহান সুরভী বলেন, ‘আমিসহ নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের সকল পলিটিক্যাল মেয়ে ছাত্রলীগ থেকে ইস্তফা দিলাম। আজ থেকে লীগের কোনও প্রোগ্রামে যাব না।’

ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পোস্টে সোহেল রানা লেখেন- ‘আমি স্বেচ্ছায় দলীয় পথ থেকে পদত্যাগ করলাম। কোটাবিরোধী আন্দোলনে যেখানে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের পাশে ছাত্রলীগের থাকার কথা, উল্টো সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের যেভাবে পেটানো হয়েছে; আমি একজন ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে লজ্জিত। যে ছাত্রলীগ অধিকার নিয়ে কথা বলে সেই ছাত্রলীগ আমি করতে পারি না।’

এ বিষয়ে চৌহালী উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সোহেল রানা জানান, মেধাবী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নগ্ন হামলার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একইসঙ্গে ছাত্রলীগের সব পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছি। দ্রুতই লিখিতভাবে সেই পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া হবে।

শহর ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহবায়ক ফারদিন ইসলাম ইফতি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আমি ফারদিন ইসলাম ইফতি। সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক; নরসিংদী শহর ছাত্রলীগ। বিবেকের তাড়নায় ও দেশের মানুষের স্বার্থে আমার নিজ পদবি থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিলাম।’

একই সুরে রাইয়াফ করিম সরকার তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আমি নরসিংদী সদর উপজেলা প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান মরহুম হাবিবুর রহমান হান্নান সরকার সাহেবের নাতি রাইয়াফ করিম সরকার। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক; নরসিংদী শহর ছাত্রলীগ। বিবেকের তাড়নায় ও দেশের মানুষের স্বার্থে আমার নিজ পদবি থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিলাম।’

এ বিষয়ে কথা হয় অব্যাহতি নেয়া রাইয়াফ করিম সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মা-বোনদের ওপর হাত তোলা হয়েছে, এটা অন্যায়। আমরা আওয়ামী লীগকে ভালোবাসি। বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি, শেখ হাসিনাকে ভালোবাসি। কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে আপাতত রাজনীতি করার ইচ্ছে নেই। আমার পরিবার আগে থেকেই আওয়ামী রাজনীতিতে যুক্ত। আমি জানি কখন কি করা লাগবে।’

দুই ছাত্রলীগ নেতার পদত্যাগের বিষয়ে নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজালাল আহমেদ শাওন বলেন, ফেসবুক থেকে বিষয়টি জেনেছি। তবে, তাদের বিষয়ে পরে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। আসলে আন্দোলনকে ঘোলাটে করছে একটা চক্র এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভুল বোঝানো হচ্ছে।

উল্লেখ্য, কোটা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের অবস্থানের কারণে সারা দেশে বেশ কিছু নেতা সংগঠনটি থেকে পদত্যাগ করেছেন।