Last Updated on 2 weeks by zajira news
অনলাইন ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: শিগগিরই বিএনপিতে শুদ্ধি অভিযান শুরু হচ্ছে। কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে এ অভিযান চালানো হবে। দলে যত বড় নেতাই হোন বা পদ-পদবি যত ভারীই হোক না কেন- শৃঙ্খলা ভঙ্গে কাউকেই কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজি, দখলসহ খুনের মতো গুরুতর অভিযোগের কারণে দল ও দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বিব্রত। আগামী নির্বাচনে এসব ঘটনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এজাতীয় অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে সবার আগে তাদের এ অভিযানের আওতায় আনা হবে। সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি অপরাধের মাত্রা ভেদে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে। অন্যদিকে- সারা দেশে মবতন্ত্রের বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করেছে বিএনপির তিনটি অঙ্গসংগঠন।
জাতীয়তাবাদী যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের পক্ষ থেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে এ মবতন্ত্র রুখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিএনপি ও তিন অঙ্গসংগঠনের সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দলের চেইন অব কমান্ড ঠিক রাখতে অচিরেই জেলা/মহানগর থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত শুদ্ধি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খুব শিগগরিই এটা শুরু হবে। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে কেন্দ্রীয় নেতারাও বাদ যাবেন না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য আরও বলেন, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থান ছিল ডেমোক্রেসির জন্য। কিন্তু আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি সারা দেশে মবোক্রেসির রাজত্ব হচ্ছে।
তিনি বলেন, চেয়েছিলাম ডেমোক্রেসি, হয়ে যাচ্ছে মবোক্রেসি। সরকারের নির্লিপ্ততার কারণে সারা দেশে এ মবোক্রেসি হচ্ছে। যারা গণ অভ্যুত্থানের শক্তিকে এ চ্যালেঞ্জ করার সাহস পাচ্ছে, তারা কারা? কেন করছে? তিনি এ মবোক্রেসি রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান সবার প্রতি।
জানা গেছে, আজীবন বহিষ্কারসহ কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার পরও লাগাম টানা যাচ্ছে না বিএনপির একশ্রেণির নেতা-কর্মীদের। এ অবস্থায় দলের তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে শুদ্ধি অভিযান শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। একই সঙ্গে এ অভিযানে ৫ আগস্টের পর দলে আসা সুবিধাভোগী নেতা-কর্মীদের চিহ্নিত করা হবে। এ ছাড়া যারা দলের সর্বোচ্চ সতর্কতা উপেক্ষা করে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন, তাদের বিষয়ে সাংগঠনিকব্যবস্থা নেওয়া হবে।বিশেষ করে, বাণিজ্যিক এলাকা এবং শিল্পাঞ্চলখ্যাত জেলাগুলোতে এ সাংগঠনিক অভিযানে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে।
দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপি হাইকমান্ডের নির্দেশে ইতোমধ্যে শুদ্ধি অভিযানের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। একেবারে ইউনিয়ন থেকে উপজেলা, জেলা ও মহানগরসহ সব পর্যায়ের কমিটি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। বিশেষ করে, প্রতিটি এলাকায় বিএনপি এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের যেসব নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে জনমনে নেতিবাচক ধারণা বা উপলব্ধি তৈরি হয়েছে তাদের বিষয়টিকে বেশি আমলে নেওয়া হচ্ছে। জনগণ যাদের ওপর রুষ্ট তাদের সতর্ক করাসহ অনেককে দল থেকে বের করে দেওয়া হবে।
মোদ্দা কথা, যারা দলের সুনাম নষ্ট করবে এবং দলের জন্য এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে- তাদের ছেঁটে ফেলতে হাইকমান্ড এতটুকু দ্বিধা করবে না। বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও দলের মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, যারা দলের ইমেজ নষ্ট করবে তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে মোটেই পিছপা হবে না বিএনপি। দল এবং দেশের স্বার্থে বিএনপি যা যা করার তাই করবে। এ বিষয়ে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যে কোনো অপকর্ম ও অন্যায়ের সঙ্গে যারা জড়িত হবে তাদের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তা ছাড়া বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ বছর ধরে লড়াই করছে। মবতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। এ মবতন্ত্র প্রতিরোধে দলমত নির্বিশেষে শিগগিরই কাজ শুরু করা হবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা যায়, দলীয় শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে ৫ আগস্টের পর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের প্রায় ৫ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবুও শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন।
বিএনপি নেতাদের মতে, বর্তমানে দেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের লাখ লাখ কর্মী-সমর্থককে নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন বিষয়। দল ক্ষমতায় থাকলেও অন্ততপক্ষে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেওয়া যেত। সে সুযোগ না থাকার ফলে বর্তমানে সাংগঠনিক ব্যবস্থার ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, ঢাকা মহানগরীতে বেশ কয়েকটি থানা বিএনপির কমিটির বেশ কিছু শীর্ষনেতার বিরুদ্ধেও চাঁদা ও দখলবাজির অভিযোগ উঠেছে। এগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রশ্নাতীত প্রমাণ পাওয়া গেলে কমিটিগুলোই ভেঙে দেওয়া হতে পারে। তবে শুধু রাজনৈতিক নয়, দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিই খারাপ বলে মনে করছে দলটি। বিশেষ করে, মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সামাজিক শৃঙ্খলাও ভেঙে গেছে। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে মবের পক্ষে কথা বলায় তা আরও উৎসাহিত হয়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য একটা ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অনেক ঘটনার ক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করা হলেও তেমন সাড়া মেলেনি। ফলে অবস্থাদৃষ্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অকার্যকর মনে হচ্ছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলের সুনামের কথা ভেবে কোনো ধরনের অভিযোগ এলেই তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সেখানে হয়তো অনেক সময় ত্যাগী নেতা-কর্মীরাও বিপদে পড়ছেন।
তিনি বলেন, আসলে দেশে গণতান্ত্রিক ও নির্বাচিত সরকার না থাকায় অনেক কিছুই স্বাভাবিকভাবে চলছে না। এ জন্য অনেক নেতিবাচক কাজও রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার মতে, বিএনপিতে এখন হাইব্রিডদের অনেক দাপট। দলের দুর্দিনে যারা নির্বিঘ্নে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন, তাল মিলিয়ে চলেছেন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে, তারাই এখন বিএনপির হর্তাকর্তা। তাদের সঙ্গে যোগ হয়েছে নব্য বিএনপি নামধারী অনেকে। যারা কখনোই বিএনপিতে সম্পৃক্ত ছিলেন না। অথচ তারাই এখন দখল ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন। এমনকি বিভিন্ন কমিটিতেও তাদের অনেককে রাখা হচ্ছে। এ নিয়ে ত্যাগী এবং দুঃসময়ের নেতা-কর্মীরা বিব্রত এবং অনেক স্থানে কোণঠাসা।
বিএনপির বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী রাজধানীসহ সারা দেশে মব তৈরি করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দল ও দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের চরিত্রহনন এবং ইমেজ নষ্ট করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চক্রটি। কতিপয় প্রতিপক্ষমনা রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সুপরিকল্পিতভাবে মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এই প্রপাগান্ডা রোধকল্পেই ব্যাপকভিত্তিক কর্মসূচি নেওয়ার পরিকল্পনা নিচ্ছে দল ও অঙ্গসংগঠনগুলো। মবতন্ত্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে দলটি।