সময়ের জনমাধ্যম

পুলিশের পক্ষ থেকে আইজিপির দুঃখপ্রকাশ, পুলিশ সদস্যদের যোগদানের নির্দেশ

বুধবার (৭ আগষ্ট) পুলিশ সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের নবনিযুক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম

Last Updated on 11 months by zajira news

নিউজ ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: পুলিশের নবনিযুক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশের ভূমিকার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন । এই আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষ–সহিংসতায় যেসব ছাত্র, সাধারণ মানুষ ও পুলিশ সদস্য হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, তার প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

একইসঙ্গে আইনে অর্পিত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে পুলিশকে একটি পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ময়নুল ইসলাম। আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে সব পুলিশ সদস্যকে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আইজিপি বলেছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সকল মেট্রোপলিটন, জেলা, নৌ, রেলওয়ে ও হাইওয়ে থানার কর্মকর্তা ও ফোর্সকে স্ব-স্ব পুলিশ লাইন্সে যোগদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষে গত ১৬ জুলাই থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে দেশে দুই শতাধিক মানুষ প্রাণ হারান। এরপর কোটার দাবি পূরণ হলেও ছাত্র–জনতা হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সরকার পতনের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাঁদের নেতৃত্বে ছাত্র–জনতার আন্দোলনের মুখে গত রোববার (৫ আগস্ট) আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর দেশের নানা জায়গায় থানায় হামলা চালিয়ে পুলিশ সদস্যদের হত্যা করা হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সারা দেশের প্রায় সব থানাসহ অন্যান্য কার্যালয় থেকে পুলিশ সদস্যরা চলে গেছেন।

এই পরিস্থিতিতে গতকাল আইজিপি পদে চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে সরকার। একইসঙ্গে মো. ময়নুল ইসলামকে নতুন আইজিপি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

আজ বুধবার (৭ আগষ্ট) দায়িত্ব বুঝে নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ময়নুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দেশের প্রয়োজনে যেকোনো সংকটময় মুহূর্তে পুলিশ সব সময় সর্বোচ্চ আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু বর্তমান বৈষম্যবিরোধী যৌক্তিক আন্দোলনে আমাদের পূর্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ দেশবাসীর প্রত্যাশা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। এজন্য বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে আমি পুলিশ প্রধান হিসেবে আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমরা এখন থেকে আমাদের ওপর অর্পিত আইনি সকল দায়িত্ব পালনে দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ। পুলিশের আইজিপি হিসেবে আমাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি।’

ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতি ফিরিয়ে আনতে আমরা সর্বাত্মকভাবে সচেষ্ট রয়েছি। আপনাদের সুচিন্তিত মতামতকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি দক্ষ, জনবান্ধব, প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক ও জবাবদিহিমূলক পেশাদার পুলিশ সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

এই ঘটনার জন্য পুলিশের কিছু কর্মকর্তা দায়ী বলে মনে করেন নবনিযুক্ত আইজিপি ময়নুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের কতিপয় উচ্চাভিলাসী, অপেশাদার কর্মকর্তার কারণে এবং কর্মকৌশল প্রণয়নে বলপ্রয়োগের স্বীকৃত নীতিমালা অনুসরণ না করায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। নেতৃত্বের ব্যর্থতায় আমাদের অনেক সহকর্মী আহত, নিহত ও নিগৃহীত হয়েছেন।’

পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে নবনিযুক্ত আইজিপি বলেন, ‘এই সন্ধিক্ষণে আমি আপনারা (সকল পুলিশ সদস্য) দেশ ও জাতির প্রয়োজনে শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে আত্মনিয়োগ করুন। আপনাদের জীবনমানের উন্নয়ন এবং সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতকরণে আমরা সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

মানবাধিকার লঙ্ঘন করা উচ্চাভিলাসী কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে কি না—সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমাদের ত্রুটি–বিচ্যুতি হয়েছে। সেগুলোর ক্ষেত্রে যারা এমন করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রবিধানসহ অন্যান্য যেসব আইন ও চাকরিবিধি রয়েছে সেগুলোর আলোকে প্রশাসনিক এবং আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।’

সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। সেগুলো হলো—রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, পিওএম, এপিবিএন, সকল মেট্রোপলিটন এবং জেলা পুলিশ লাইন্সসহ বিশেষায়িত সকল পুলিশ ইউনিটের সব কর্মকর্তা ও ফোর্সকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে কর্মস্থলে যোগদান করতে হবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের বিষয়ে আইজিপি বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীর শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে সকল স্তরের সহকর্মীকে সামাজিক মাধ্যমে কোনো প্রকার ব্যক্তিগত, সমিতি, ব্যাচ, অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে কোনো দাবি, মন্তব্য, প্রতি উত্তর প্রদানে বিরত থাকার নির্দেশ প্রদান করছি।’

আইজিপি বলেন, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও জেলার পুলিশ সুপারগণ স্ব-স্ব অধিক্ষেত্রের থানা এলাকায় জ্যেষ্ঠ নাগরিক, পেশাজীবী, ছাত্র প্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি গঠন করবেন। আমরা জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি বর্ণিত কমিটি থানা ও থানা এলাকার নিরাপত্তা বিধানে আপদকালীন সহায়ক ভূমিকা রাখবে এবং পরবর্তীতে এর চূড়ান্ত রূপরেখা প্রণয়ন করা হবে।