সময়ের জনমাধ্যম

কানাডার ‘সাইবার শত্রুর’ তালিকায় যুক্ত করলো ভারতকে

Last Updated on 1 week by zajira news

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: জাস্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বাধীন কানাডিয়ান সরকার ভারতকে সাইবার নিরাপত্তায় ‘শত্রু দেশ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে । যা নির্দেশ করছে নয়াদিল্লিকে এখন শত্রু দেশ হিসেবে বিবেচনা শুরু করেছে কানাডা।

সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, ভারতকে ‘সাইবার প্রতিপক্ষ’ হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেছে কানাডা।

এর প্রতিক্রিয়ায় ভারত বলেছে, আন্তর্জাতিকভাবে তাদের আক্রমণ ও ক্ষতি করার জন্য কানাডা নতুন আরেকটি কৌশল হাতে নিয়েছে। শনিবার (২ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, কানাডিয়ান সরকারের কিছু কর্মকর্তা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন কানাডা বিশ্বমণ্ডলে ভারতের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। তিনি দাবি করেছেন ভারতকে ‘সাইবার প্রতিপক্ষ’ অর্থাৎ সাইবার শত্রু হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে কানাডা কোনো শক্তিশালী প্রমাণ প্রকাশ করেনি।

এদিকে কানাডা অভিযোগ করেছে, সাইবার নিরাপত্তা ব্যবহার করে ভারত তাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে। সম্প্রতি দেশটি তাদের ‘সাইবার হুমকি নিরূপণ প্রতিবেদন ২০২৫-২৬’ প্রকাশ করে। এতে ভারতকে ‘সাইবার প্রতিপক্ষ’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। ভারতকে নিজেদের ‘সাইবার শত্রুর’ যে তালিকায় কানাডা যুক্ত করেছে সেখানে আছে চীন, রাশিয়া, ইরান এবং উত্তর কোরিয়ার মতো দেশগুলো।

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দেশটির খালিস্তানপন্থীদের লক্ষ্যবস্তু বানানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে কানাডার এক মন্ত্রীর করা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে নয়াদিল্লি। এই অভিযোগকে ‘‘অযৌক্তিক এবং ভিত্তিহীন’’ দাবি করে বৃহস্পতিবার দিল্লিতে নিযুক্ত কানাডীয় এক কূটনীতিককে তলব করেছে ভারত।

এর আগে, মঙ্গলবার কানাডার উপ-পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রী ডেভিড মরিসন দেশটির জননিরাপত্তা ও জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বলেছিলেন, কানাডায় বসবাসরত খালিস্তানপন্থীদের নিশানা বানিয়ে সহিংসতা, ভীতি প্রদর্শন এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছিলেন ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

শুক্রবার এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, বৃহস্পতিবার কানাডিয়ান হাইকমিশনের একজন প্রতিনিধিকে তলব করা হয়েছিল এবং তার কাছে একটি কূটনৈতিক নোট হস্তান্তর করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘‘নোটে জানানো হয়েছে,উপমন্ত্রী ডেভিড মরিসনের কমিটির কাছে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোলা অযৌক্তিক এবং ভিত্তিহীন অভিযোগের কঠোর প্রতিবাদ জানায় ভারত সরকার।’’

রণধীর জয়সওয়াল বলেন, কানাডার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ভারতকে অসম্মানিত করার এবং অন্যান্য দেশকে প্রভাবিত করার সচেতন কৌশলের অংশ হিসাবে ইচ্ছাকৃতভাবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ভিত্তিহীন দাবি ফাঁস করেছেন। এটি দীর্ঘদিন ধরে ভারতের সরকার বর্তমান কানাডীয় সরকারের রাজনৈতিক এজেন্ডা ও আচরণ সম্পর্কে যে ধারণা পোষণ করেছে, তা নিশ্চিত করছে। এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য গুরুতর পরিণতি বয়ে আনবে।

অমিত শাহর বিরুদ্ধে তোলা কানাডার অভিযোগের বিষয়ে প্রথমে সংবাদ পরিবেশন করেছিল মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট। ওয়াশিংটন পোস্টকে অমিত শাহর নাম নিশ্চিত করার তথ্য জানিয়েছেন ডেভিড মরিসন। এই বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এটা প্রমাণ করে যে, উচ্চপদস্থ কানাডীয় কর্মকর্তারা ইচ্ছাকৃতভাবে গণমাধ্যমে ভিত্তিহীন দাবি ফাঁস করেছেন। জয়সওয়াল সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ ভারত ও কানাডার সম্পর্কের জন্য ‘‘গুরুতর পরিণতি’’ ডেকে আনবে।

ভারত শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ‘‘সন্ত্রাসী’’ বলে দাবি করে এবং দেশের নিরাপত্তার জন্য তাদের হুমকি হিসেবে মনে করে। তবে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ভারতের ভূখণ্ডে খালিস্তান নামে একটি স্বাধীন আবাসভূমি প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করে আসছেন। ১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকে ভারতে এক বিদ্রোহে কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল।

সেই সময়কালের মধ্যে ১৯৮৪ সালের শিখ-বিরোধী দাঙ্গাও রয়েছে। শিখ দেহরক্ষীদের হাতে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের পর হাজার হাজার লোককে হত্যা করা হয়েছিল। নিরাপত্তাবাহিনীকে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বের করে দেওয়ার জন্য পবিত্র শিখ মন্দিরে হামলা চালানোর নির্দেশ দেওয়ার পর দেহরক্ষীর হাতে নিহত হয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী।

এর আগে, কানাডা চলতি অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে ভারতীয় কূটনীতিকদের বহিষ্কারের ঘোষণা দেয়। কানাডার মাটিতে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারকে ২০২৩ সালের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এই পদক্ষেপ নেয় অটোয়া। জবাবে ভারতও কানাডার কূটনীতিকদের বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছে।

অবশ্য বিদেশের মাটিতে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লক্ষ্যবস্তু করার ক্ষেত্রে ভারতের জড়িত থাকার বিষয়ে কানাডার এই ঘটনাটিই একমাত্র উদাহরণ নয়। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে মার্কিন-কানাডীয় নাগরিক ও শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যার ব্যর্থ ষড়যন্ত্রের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে বিকাশ যাদব নামে সাবেক ভারতীয় এক গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করেছে ওয়াশিংটন।