Last Updated on 1 week by zajira news
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পর রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বাছাইয়ের প্রক্রিয়া আগামী সপ্তাহগুলো থেকে শুরু করবেন।
গোয়েন্দা, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, বাণিজ্য, অর্থনীতি, অভিবাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেখভালের জন্য ট্রাম্পের পছন্দের সম্ভাব্য তালিকায় কোন কোন ব্যক্তি স্থান পেতে পারেন, তার একটা ধারণা দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সম্ভাব্য তালিকাটি দেখে নেওয়া যাক
স্কট বেসেন্ট
ট্রাম্পের একজন গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বেসেন্ট। তাঁকে অর্থমন্ত্রী (ট্রেজারি সেক্রেটারি) হিসেবে বেছে নিতে পারেন ট্রাম্প।
দীর্ঘদিনের হেজ ফান্ড বিনিয়োগকারী বেসেন্ট ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েক বছর শিক্ষকতা করেছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে।
বেসেন্ট দীর্ঘসময় ধরে ‘লেইস-ফেয়ার’ নীতির পক্ষে। ট্রাম্প-পূর্ব রিপাবলিকান পার্টিতে এই নীতি জনপ্রিয় ছিল। সমঝোতার হাতিয়ার হিসেবে শুল্কের ব্যবহার বিষয়ে ট্রাম্পের নীতির পক্ষেও তাঁকে কথা বলতে দেখা গেছে। তিনি অতীতে ট্রাম্পের অর্থনৈতিক দর্শনের প্রশংসা করেছেন।
জন পলসন
ট্রেজারি সেক্রেটারি হিসেবে ট্রাম্পের বিবেচনায় আসতে পারেন জন পলসন। পলসন একজন ধনকুবের। তিনি হেজ ফান্ড ব্যবস্থাপক। ট্রাম্পের একজন অন্যতম দাতা পলসন। দীর্ঘদিনের এই অর্থায়নকারী তাঁর সহযোগীদের বলেছেন, এই পদের বিষয়ে তাঁর আগ্রহ আছে।
ল্যারি কুডলো
ল্যারি কুডলোকেও ট্রেজারি সেক্রেটারি পদে দেখা যেতে পারে। তিনি ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্কের একটি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক।ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের বেশির ভাগ সময় তাঁর প্রশাসনের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন কুডলো। তিনি আগ্রহী হলে অর্থনীতিকেন্দ্রিক অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদেও তাঁকে বেছে নিতে পারেন ট্রাম্প।
রবার্ট লাইথাইজার
লাইথাইজারকে ট্রেজারি সেক্রেটারি করা হতে পারে। তিনি ট্রাম্পের একজন অনুগত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছিলেন লাইথাইজার। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে তাঁর প্রশাসনে যোগ দেওয়ার জন্য তাঁকে প্রায় নিশ্চিতভাবেই আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। লাইথাইজারকে ট্রেজারি সেক্রেটারি করা না হলেও তাঁকে অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিতে পারেন ট্রাম্প। আবার লাইথাইজারকে তাঁর পুরোনো দায়িত্বেও দেখা যেতে পারে।
রিচার্ড গ্রেনেল
গ্রেনেলকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করতে পারেন ট্রাম্প। তাঁর পররাষ্ট্রনীতি-সম্পর্কিত উপদেষ্টাদের মধ্যে আছেন গ্রেনেল। তাঁকে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন গ্রেনেল। এ ছাড়া তিনি জার্মানিতে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বও পালন করেন।
গত সেপ্টেম্বর মাসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন ট্রাম্প। এই বৈঠকে গ্রেনেল উপস্থিতি ছিলেন। বিদেশি নেতাদের সঙ্গে গ্রেনেলের ব্যক্তিগত যোগাযোগ আছে। তবে তাঁকে নিয়ে নানান বিতর্কও আছে। ও’ব্রায়েনকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করতে পারেন ট্রাম্প। তাঁর প্রথম মেয়াদের সর্বশেষ (চতুর্থ) জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলছেন ও’ব্রায়েন। তাঁরা দুজন প্রায়ই জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কথা বলেন। ও’ব্রায়েন সম্ভবত পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিংবা অন্য শীর্ষ পররাষ্ট্রনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত পদে নিয়োগ পেতে চাইছেন।
২০২১ সালে ট্রাম্প হোয়াইট হাউস ছাড়েন। এরপর থেকে ও’ব্রায়েন বিদেশি নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখছেন। গত মে মাসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেছিলেন।
বিল হ্যাগারটি
হ্যাগারটিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করা হতে পারে। টেনেসির এই সিনেটর ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের দায়িত্ব গ্রহণসংক্রান্ত কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদের জন্য হ্যাগারটিকে একজন শীর্ষস্থানীয় প্রতিযোগী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি মূলত রিপাবলিকান পার্টির সব উপদলের সঙ্গে জোরালো সম্পর্ক বজায় রাখছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদের জন্য তাঁকে মনোনীত করা হলে তাঁর নিয়োগ সম্ভবত সহজেই সিনেটের শুনানিতে অনুমোদন পাবে।
মার্কো রুবিও
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মার্কো রুবিওকে বেছে নিতে পারেন ট্রাম্প। রুবিও ফ্লোরিডা থেকে নির্বাচিত সিনেটর। ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হতে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। ট্রাম্পের নীতির সঙ্গে রুবিওর নীতির ব্যাপক মিল রয়েছে। হ্যাগারটির মতো তিনি এবার ট্রাম্পের রানিংমেট হওয়ার দৌড়ে ছিলেন। রুবিও দীর্ঘদিন ধরে সিনেটের বৈদেশিক বিষয়সংক্রান্ত কমিটিতে আছেন।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে জাপানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন হ্যাগারটি। সে সময় ট্রাম্প তৎকালীন জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে তাঁর উষ্ণ সম্পর্ক থাকার কথা বলেছিলেন। হ্যাগারটির নীতি ট্রাম্পের নীতির সঙ্গে বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ।
মাইক ওয়াল্টজ
ওয়াল্টজকে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদে দেখা যেতে পারে। তিনি ফ্লোরিডা থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য। ওয়াল্টজ মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে নিজেকে একজন চীনের অন্যতম প্রধান কট্টর সমালোচক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। চীন-সম্পর্কিত বিভিন্ন বিল প্রতিনিধি পরিষদে আনার ব্যাপারে তাঁর ভূমিকা দেখা গেছে। মার্কিন সেনাবাহিনীতে কাজ করার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদে তাঁর সম্ভাবনা প্রবল বলে মনে করা হচ্ছে।
মাইক পম্পেও
প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে পম্পেওকে বেছে নিতে পারেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে পম্পেও সিআইএর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পরে তাঁকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করেছিলেন ট্রাম্প। এবার জাতীয় নিরাপত্তা, গোয়েন্দা বা কূটনীতিসংশ্লিষ্ট পদেও বসাতে পারেন ট্রাম্প।
টম কটন
কটন হার্ভার্ড কলেজ ও হার্ভার্ড ল স্কুলে পড়েছেন। তিনি সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন। ট্রাম্প দাতাদের পছন্দের মানুষ আরকানসাসের এই সিনেটর। তাঁকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন ট্রাম্প।
কিথ কেলগ
জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত কোনো পদে আসতে পারেন কেলগ। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল। তিনি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি-বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে টম হোমানকে বিবেচনায় নিতে পারেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তাঁর প্রশাসনে কাজ করেছিলেন তিনি। ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে দেড় বছর দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।
একই পদে বিবেচনায় আসতে পারেন চাদ ওলফ। তিনি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে প্রায় ১৪ মাস হোমল্যান্ড সিকিউরিটি-বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন। এ ছাড়া এই পদে মার্ক গ্রিনকেও নিয়োগ দিতে পারেন ট্রাম্প। গ্রিন বর্তমানে প্রতিনিধি পরিষদের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি-বিষয়ক কমিটির চেয়ারমানের দায়িত্ব আছেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল পদে জন র্যাটক্লিফকে বাছাই করতে পারেন ট্রাম্প। তিনি সাবেক কংগ্রেস সদস্য ও প্রসিকিউটর। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তিনি ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এই পদে বিবেচনায় আসতে পারেন সাবেক প্রসিকিউটর মাইক লি। তিনি উটাহ অঙ্গরাজ্যের বর্তমান সিনেটর।
ট্রাম্পের সম্ভাব্য ট্রেজারি সেক্রেটারি হতে পারেন লুটনিক। তিনি ট্রাম্পের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণসংক্রান্ত কার্যক্রমের কো-চেয়ার।
আর্থিক সংস্থা ক্যান্টর ফিটজেরাল্ডের দীর্ঘদিনের প্রধান নির্বাহী লুটনিক। তিনি ট্রেজারি সেক্রেটারি হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন বলে জানা যায়। শুল্ক ব্যবহারসহ ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতির ভূয়সী প্রশংসাকারীদের একজন লুটনিক। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে কী কী নীতি প্রণয়ন করা হবে, সে বিষয়ে মাঝেমধ্যে তাঁকে অবাঞ্ছিত মতামত দিতে দেখা গেছে।
এছাড়া, সুসি উইলসকে দেখা যেতে পারে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের চিফ অব স্টাফ পদে । তিনি ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রমের সহব্যবস্থাপক।