সময়ের জনমাধ্যম

‘তুই আওয়ামী লীগ করিস, বাঁচতে হলে ২০ লাখ টাকা দে’

ছাত্রদল-যুবদলের ৪ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

Last Updated on 5 hours by zajira news

নিউজ ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: রাজধানীর মিরপুরের পশ্চিম মণিপুরে এক ব্যক্তির বাসায় ঢুকে জোর করে টাকা আদায়ের অভিযোগে ছাত্রদল ও যুবদলের ৪ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার (৬ জুলাই) গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী সিরাজুল ইসলাম, যিনি একসময় শ্রমিক লীগ করতেন, তার পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

পুলিশ ও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, গত রোববার রাত ১০টার দিকে মিরপুরের পশ্চিম মণিপুর এলাকায় সিরাজুল ইসলামের (৫৬) বাসায় ১০-১৫ জনের একটি দল ঢোকে। এই দলের সদস্যরা নিজেদের ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা পরিচয় দেন।

তারা সিরাজুলের উদ্দেশে বলেন, ‘তুই আওয়ামী লীগ করিস, আওয়ামী ফ্যাসিস্টের লোক, তোরে পুলিশে ধরাইয়া দেব, বাঁচতে হলে ২০ লাখ টাকা দে।’ এরপর রাতভর সিরাজুল ও তার পরিবারের ওপর ভয়ভীতি ও হুমকি চলতে থাকে। অন্যদিকে, সিরাজুলের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রাণ বাঁচাতে কাকুতি-মিনতি করা হয়। অবশেষে, রাত তিনটার দিকে ওই বাসা থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে বেরিয়ে আসেন তারা।

চাঁদাবাজির খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মিরপুর মডেল থানা-পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। খবর পেয়ে র্যাবও সেখানে পৌঁছায়। পুলিশ ধাওয়া করে এই চাঁদাবাজদের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির ১৬ হাজার টাকা এবং একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। তবে দলের বাকি সদস্যরা টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।

চাঁদাবাজির এ ঘটনায় গ্রেপ্তার চারজনের মধ্যে মিরপুর থানা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আতিকুর রহমান ওরফে মিন্টু (৩৫) এবং যুগ্ম আহ্বায়ক তাবিত আহমেদ আনোয়ার ওরফে আনোয়ার হোসেন তাবিত (৩৫) রয়েছেন। এ ছাড়া গ্রেপ্তার অপর দুজন হলেন মো. রতন মিয়া (৩৪), যিনি মিরপুরের একটি ওয়ার্ডের যুবদল করেন এবং মো. ইসমাইল হোসেন (২৪), যিনি মিরপুর থানা ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এ বিষয়ে মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাজ্জাদ রোমন সোমবার (৭ জুলাই) সংবাদমাধ্যমকে বলেন, গত রোববার গভীর রাতে মণিপুর এলাকা থেকে তার সরকারি নম্বরে ফোন করে জানানো হয়েছিল, পুলিশ পরিচয়ে সিরাজুলের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। এরপরই মিরপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং র্যাবও সেখানে পৌঁছায়। তখন ধাওয়া করে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী জাহানারা ইসলাম সোমবার সকালে বাদী হয়ে গ্রেপ্তার চারজনসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৮-১০ জনকে আসামি করে মিরপুর মডেল থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা করেছেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ছাত্রদল ও যুবদলের ওই চার নেতা-কর্মীকে সোমবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। পরে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

জাহানারা ইসলামের করা মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, রোববার রাত ১০টার দিকে গ্রেপ্তার ও পলাতক আসামিরা বাসার প্রধান ফটকে এসে কলবেল বাজাতে থাকেন। এ সময় পরিচয় জেনে দরজা খুলে দিলে তারা বাসায় ঢুকে সিরাজুল ইসলাম ও তার স্ত্রীকে জিম্মি করেন। তারা সিরাজুল ইসলামকে ‘তুই আওয়ামী লীগ করিস, আওয়ামী ফ্যাসিস্টের লোক, তোরে পুলিশ দিয়ে ধরাইয়া’ দেব বলে ভয়ভীতি দেখান। তাঁরা সিরাজুলের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা চান। না দিলে হলে সিরাজুল ও তাঁর স্ত্রীকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন আসামিরা।

প্রাণ বাঁচাতে সিরাজুল ও তার স্ত্রী তাদের কাছে থাকা ২০ হাজার টাকা আসামিদের হাতে তুলে দেন। এ সময় আসামিরা বাকি টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দিতে থাকেন। সিরাজুল ও তার স্ত্রী উপায় না দেখে ওই বাড়ির চতুর্থ তলার বাসিন্দার কাছ থেকে তিন লাখ টাকা ঋণ নেন এবং তা আসামিদের হাতে তুলে দেন। ওই টাকা পেয়েও আসামিরা বাকি টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন। তখন সিরাজুল তার মোবাইল ব্যাংকিংয়ে থাকা ৩০ হাজার টাকা আসামিদের দিয়ে দেন। এতেও তারা শান্ত না হয়ে আরও টাকা চান। একপর্যায়ে সিরাজুল ও তার স্ত্রী তাদের ছেলেমেয়ের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেড় লাখ টাকা এনে আসামিদের হাতে তুলে দেন।

রাত তিনটার দিকে আসামিরা পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে বের হচ্ছিলেন। এর মধ্যে পুলিশ ও র্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এ সময় আসামিরা এদিক-সেদিক দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ ও র্যাব চার আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। অন্যরা পালিয়ে যান।