সময়ের জনমাধ্যম

যুদ্ধবিরতি বাড়ার আশা ভেস্তে দিয়ে গাজায় ইসরায়েলি হামলা, নিহত বেড়ে ২৩২

লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিহতের সংখ্যা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রোজার মাস হওয়ার কারণে অনেকেই যখন সেহেরির খাবার খাচ্ছিলেন, তখন গাজায় বিস্ফোরণ শুরু হয়। ওই সময় অন্তত ২০টি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানকে তারা উড়তে দেখেছেন।

Last Updated on 3 months by zajira news

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা ভেস্তে দিয়ে গাজায় শক্তিশালী হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী, যাতে অন্তত ২৩২ জন নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছেন অনেক মানুষ।

সিএনএন লিখেছে, মঙ্গলবার ভোরে এ প্রাণঘাতী হামলা চালানো হয়, যাতে হামাস নেতাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে বলে ভাষ্য ইসরায়েলের। নিহতদের মধ্যে অনেক শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

বিবিসি লিখেছে, গাজার উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও হামাসের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা কর্মকর্তা মাহমুদ আবু ওয়াফাহ ওই হামলায় নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর এটিই সবচেয়ে বড় হামলা। যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর আলোচনায় এক সপ্তাহ ধরে অচলাবস্থার পর ইসরায়েল ফের হামলা শুরু করল।

রয়টার্স লিখেছে, গাজার উত্তরাঞ্চল, গাজা সিটি এবং মধ্য ও দক্ষিণ গাজার দেইর আল-বালাহ, খান ইউনিস ও রাফাহসহ একাধিক স্থানে হামলার খবর পাওয়া গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রোজার মাস হওয়ার কারণে অনেকেই যখন সেহেরির খাবার খাচ্ছিলেন, তখন গাজায় বিস্ফোরণ শুরু হয়। ওই সময় অন্তত ২০টি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানকে তারা উড়তে দেখেছেন। হামলার পর গাজার বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন। কেউ কেউ হাসপাতালে ছোটাছুটি করছেন।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের বিবৃতি অনুযায়ী, দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ ওই হামলার নির্দেশ দেন। “আমাদের জিম্মিদের মুক্তি দিতে হামাসের বারবার অস্বীকৃতি জানানোর পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্টের দূত স্টিভ উইটকফ এবং মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে পাওয়া সব প্রস্তাব হামাসের প্রত্যাখ্যানের পর এ হামলা চালানো হয়।”
বিবৃতিতে বলা হয়, এখন থেকে ইসরাইল সামরিক শক্তি বাড়িয়ে হামাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। সপ্তাহান্তে হামলার পরিকল্পনা উপস্থাপন করে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী, যাতে সায় দেন রাজনৈতিক নেতৃত্ব।

যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভাঙার জন্য ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ এনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে হামাস। তারা বলছে, গাজায় থাকা বাকি ইসরায়েলি জিম্মিদের ‘অজানা পরিণতির’ মুখে ফেলেছে ইসরায়েল। তবে হামাস এখনও ফের যুদ্ধ শুরুর ঘোষণা দেয়নি। তার বদলে মধ্যস্থতাকারীদের এবং জাতিসংঘকে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছে।

হোয়াইট হাউজের এক মুখপাত্র ফক্স নিউজকে বলেছেন, হামলা চালানোর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেছে ইসরায়েল।

বিবিসি লিখেছে, সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্ব ১ মার্চ শেষ হওয়ার পর সেটিকে এগিয়ে নেওয়ার পথ খুঁজছিলেন মধ্যস্থতাকারীরা। যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্বের মেয়াদ মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র, যার মধ্যে আরো জিম্মি ও বন্দি বিনিময়ের শর্ত ছিল। তবে আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, পরোক্ষ আলোচনায় উইটকফের চুক্তির মূল দিকগুলো নিয়ে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর সবশেষ গাজা যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। ওই হামলায় ১২০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটে, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক। ওই সময় ২৫১ জনকে জিম্মিও করে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠনটি। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, জাতিসংঘসহ অন্যদের তথ্য অনুযায়ী, ওই হামলার পাল্টায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলায় সাড়ে ৪৮ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক।

গাজার ২১ লাখ মানুষ একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ৭০ শতাংশেরও বেশি ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য, পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে; সংকট দেখা দিয়েছে খাবার, জ্বালানি, ওষুধ ও আশ্রয় পাওয়া নিয়ে।