সময়ের জনমাধ্যম

ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যাত্রা শুরু

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে শপথ পড়ান

Last Updated on 5 months by zajira news

নিউজ ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বৃহস্পতিবার (০৮ আগষ্ট) রাতে বঙ্গভবনে ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪ জন শপথ নিয়েছেন।

সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর গত রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ড. ইউনূস বলেন, ‘অরাজকতার বিষবাষ্প এখন যে-ই ছড়াবে, বিজয়ী ছাত্র-জনতাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পূর্ণ শক্তি তাকে ব্যর্থ করে দেবে।’

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া নতুন সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত হয়েছেন, যা দেশের ইতিহাসে প্রথম।

উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়ে গণ-অভ্যুত্থানে জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে কাজ করার কথা বলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘আমরা যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে এই গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত করেছিলাম, যে প্রতিশ্রুতির জন্য শত শত ভাইবোন হতাহত হয়েছেন, সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতেই আমরা সরকারে এসেছি। সেই প্রতিশ্রুতিগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে পূরণ করার জন্য সচেষ্ট থাকব।’

এই সরকারে মোট উপদেষ্টা ১৬ জন। সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা, চিকিৎসক বিধান রঞ্জন রায় ও নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফারুক-ই-আজম ঢাকার বাইরে থাকায় শপথ নিতে পারেননি।

উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়া অন্য ১১ জন হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের নির্বাহী পরিচালক আদিলুর রহমান খান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ, সাবেক পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদ হোসেন, পরিবেশ আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, নারী অধিকারকর্মী ফরিদা আখতার, ইসলামি চিন্তাবিদ আ ফ ম খালিদ হাসান, গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূর জাহান বেগম ও নির্বাচনব্যবস্থা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ শারমিন মুরশিদ।

উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর সরকারের অগ্রাধিকার নিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, গত কয়েক দিন বিভিন্ন ধরনের অপরাধ হয়েছে। কোনো কোনো দল দেশের বিভিন্ন এলাকায় দখলের সংস্কৃতিতে নেমেছে। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

উপদেষ্টারা শপথ নিলেও কে কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাচ্ছেন, তা ঘোষণা করা হয়নি। তবে গত কয়েকটি সরকারের মন্ত্রিসভার আকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিন গুণ বা এর কাছাকাছি ছিল। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের কাঁধে একাধিক মন্ত্রণালয় সামলানোর দায়িত্ব পড়তে পারে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘যে অপশক্তির বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি, আমরা যেন সেই শক্তির মতো হয়ে না যাই। তাহলে ছাত্র-জনতা যে অভাবনীয় একটা সুযোগ আমাদের জন্য নিয়ে এসেছে, সেটার অর্জন ও ও মাহাত্ম্য ম্লান হয়ে যাবে।’ আরেক উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ মন্তব্য করেন, একটা বিধ্বস্ত অবস্থায় এ সরকার গঠিত হয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে এগোনোর জন্য সরকারের সময় প্রয়োজন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম প্রথম প্রস্তাব করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা। তাঁদের ৩৬ দিনের টানা আন্দোলন সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে। ৪ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এক দফা দাবি ঘোষণার পরদিন সোমবারই পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। এরপর মঙ্গলবার ভোরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে নাম প্রস্তাব করা হয়।

এর আগে সোমবার বিকেলে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের নিয়ে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ও অন্য দুই বাহিনীর প্রধান সেনানিবাসে বৈঠক করেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে রাতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে আরেকবার বৈঠক হয়। এতে রাজনীতিক, ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও তিন বাহিনীর প্রধানেরা অংশ নেন। তবে কোনো বৈঠকেই আওয়ামী লীগ বা তাদের সমমনা দলের কোনো প্রতিনিধিকে ডাকা হয়নি। এসব বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোও ড. ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে সম্মতি দেয়।