সময়ের জনমাধ্যম

এক যুবক ‘দেড় মিনিটে চারুকলায় ঢুকে মোটিফে আগুন দেন ’

পুলিশ ধারনা করছে ঘটনাটি ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’

Last Updated on 3 months by zajira news

অনলাইন ডেস্ক, জাজিরা নিউজ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে বর্ষবরণ শোভাযাত্রার মোটিফে আগুন লাগার ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সন্দেহভাজন এক যুবকের কথা বলেছেন অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইসরাফিল রতন।

তিনি বলেন, সে যুবক মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যে দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে আগুন লাগিয়ে একইভাবে চলে যান। “৪টা ৪৫ মিনিট থেকে ৪ টা ৪৬ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের মধ্যে সে দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে আগুন দিয়ে আবার দেয়াল টপকে বের হয়ে যায়।”

ফুটেজ দেখে পুরো ঘটনাটিকেই ‘পূর্বপরিকল্পিত’ বলে মনে হয়েছে তুলে ধরে তিনি বলেন, “ছেলেটি অনেক স্মার্ট, অর্ডিনারি কোনো পিপল মনে হয়নি। মনে হয়েছে কারও অ্যাসাইন করা ছিল।”

শনিবার (১২ এপ্রিল) ভোরের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে আগুন লেগে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার’ জন্য তৈরি করা ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ এবং ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফ পুড়ে গেছে।

আগের দিন শুক্রবার আয়োজন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেন, এবার শোভাযাত্রায় এবার বড়, মাঝারি এবং ছোট মোটিফ থাকবে। এর মধ্যে বড় মোটিফ থাকবে ৬টি। সবার সামনে থাকবে ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’। নারীর দাঁতাল এই মুখাবয়বে মাথায় রয়েছে খাড়া দুটো শিং।

চারুকলা অনুষদের ডিন আজহারুল ইসলাম বলেন, “ভোরবেলা আগুন লেগেছে। সম্ভবত ফজরের নামাজের সময় হতে পারে। তবে কীভাবে আগুন লেগেছে- এই বিষয়টা নিয়ে আমরা তদন্ত করে মন্তব্য করব। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা সভায় বসব।”

তবে তদন্তের আগেই মোটিফ পুড়ে যাওয়ার ঘটনার পেছনে ‘ক্ষমতাচ্যুত সরকারের দোসরদের’ হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

ফেইসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেছেন, চারুকলায় ‘ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব’ পুড়িয়েছে ‘হাসিনার দোসররা’। আর ঘটনাটি ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে মনে করছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশনস্) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “আপাতদৃষ্টিতে দেখে যেটা মনে হচ্ছে এটা এক্সিডেন্টাল না, কেউ ইনটেনশনালি এটা করছে। এটুকু আমরা নিশ্চিত।”

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের উপস্থিতিতে সিসিটিভি ফুটেজ দেখা হয় বলে জানিয়েছেন চারুকলার সহযোগী অধ্যাপক ইসরাফিল রতন।

তিনি বলেন, “সে যুবকটি যখন ওয়াল টপকিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে তখন কয়েকটি কুকুর বেরিয়ার দেয়, গাছপালার পাশে একটু দাঁড়ায়। কুকুরগুলো শান্ত হলে সে সামনে গিয়ে মোটিফে আগুন ধরিয়ে সামনে গিয়ে একটু অবজার্ভ করে। “যখন দেখে আগুন ঠিকমত ধরেনি, তখন ফিরে এসে আবার আগুন দেয়। এরপর একটানে দেয়াল টপকে বেরিয়ে ছবির হাটের দিকে চলে যায়।”

চারুকলার এই শিক্ষক বলেন, “আমার কাছে মনে হয়েছে সে ভেতরে প্রবেশের আগে অনেক্ষণ ধরে পরিস্থিতি অবজার্ভ করেছে। ওই সময় প্রক্টরিয়াল টিমের দুইজন নামাজ পড়তে গিয়েছিল। যে পুলিশ সদস্যরা ছিলেন, তারা পেছনের দিকে সম্ভবত ওয়াশরুমে গিয়েছিল। ওই ফাঁকা সময়টাতেই সে ঢুকে পড়ে আগুন দিয়ে চলে যায়।” “ওয়াল টপকায়ে আসবে আবার ফিরে যাবে, তার সাথে কোনও সঙ্গী ছিল না। তারপরেও ওই সুযোগে সে রিস্কটা নিয়ে ফেলেছে।”

তাকে দেখে ক্যাম্পাসেরই কেউ মনে হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “হতে পারে। তবে মনে হয়েছে সে এখানকার পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানে।

শাহবাগ থানার ওসি মো. খালিদ মনসুরও সিসিটিভি ফুটেজে একজনকে দেখা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে গনমাধ্যমকে বলেন, “আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি।

ইতোমধ্যে চারুকলা অনুষদের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটিতে নিজে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও কত সদস্যের কমিটি সেটি তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি ইসরাফিল রতন।